জীবন থেকে নেয়া কাহিনী অবলম্বনে রচিত ছোট গল্প 'কসিমুদ্দিনের সংসার'। ।

আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩১

কসিমুদ্দিনের সংসার

 

এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে কসিমুদ্দিনের সংসার। চাষি পরিবার, যা জমি আছে তাতে চাষাবাদ করে সংসারের যাবতীয় খরচ সংকুলান হয়েও কিছু উদ্বৃত্ত থাকে।
কসিমুদ্দিন নিজে হাতে চাষাবাদ করে। তবে একার পক্ষে সব জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না তাই সারা বছরব্যাপী প্রায় প্রতিদিনই দু চারজন করে মজুর তাকে রাখতে হয়।
কসিমুদ্দিন নিজে নিরক্ষর, কিন্তু ছেলে মেয়েকে দুটোকে সেই প্রথম থেকেই ভাল স্কুল কলেজে লেখাপড়া শেখানোর জন্য টাকা পয়সার ব্যয় করতে কোন কার্পণ্য করেনি কখনো। ছেলে মেয়ে দুজনই শহরের নাম করা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে লেখা পড়া করে এখন তারা সমাজের উচ্চস্তরে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে শহরেই স্থায়ীভাবে বসতবাড়ি গড়েছে।
এই বৃদ্ধ বয়সে শরীরে আর কুলোই না, তাছাড়া খরচও কমে গিয়েছে তাই নিজে আর চাষাবাদের কাজ করে না কসিমুদ্দিন। ওদের বাড়ীতে স্থায়ীভাবে থাকা একজন কাজের লোক আছে সেইই সব দেখাশোনা করে। মোড়ল ওর নাম, খুব কর্মঠ আর বিশ্বস্ত। তার জন্য ভিটিতে একটা ঘরও করে দিয়েছে।

এই বৃদ্ধ বয়সে কসিমুদ্দিন আর তার স্ত্রী মরিয়ম বিবি বাড়ীর আঙ্গিনাতে হাটাচলা করে দিন কাটিয়ে দেয়।
গ্রামের আর দশটা বাবা মায়ের মত ছেলে মেয়েদের কাউকেই দেখেশুনে বিয়ে দিতে হয়নি কসিমুদ্দিনের, ওরা নিজেদের পরিচিতি থেকে নিজ নিজ পছন্দ মত শহরের কমুনিটি সেন্টারে বিয়ে করেছে।
ছেলের বিয়েতে কসিমুদ্দিন আর মরিয়ম বিবি তার শহরের বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু ওদের পোশাক আসাক, চেহারা, আচার আচরণ ইত্যাদি সেখানে মানানসই না হওয়ার কারণেই ছেলে জসিমই বাবা মাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে না যেয়ে বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।
বিয়ের পর বউ বাসায় আসতে অনেক রাত হয়ে যাওয়াই পরদিন সকালে ওদেরকে কোন রকমে আশীর্বাদের কাজটা সেরেই ছেলেকে বলেছিল তাড়াতাড়ি বাড়ী ফেরার ব্যবস্থা করতে।
-ঠিক আছে বাবা, তোমাদের জন্য গাড়ী আসছে, তোমরা তৈরি হয়ে নাও।
ছেলের কথা শুনে কসিমুদ্দিন আর মরিয়ম বিবি দুজনেই একটু অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
-ছেলে যেন আগে থেকেই জানত যে বাবা মা সকালেই চলে যেতে চাবে!
কিন্তু জসিম তাদের দিকে না তাকিয়েই ঘরে বউয়ের কাছে চলে গেল।
কসুমুদ্দিন আর তার স্ত্রী মরিয়ম বিবি বিনাবাক্যে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে নিজেদের যৎসামান্য কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসলো।
সেদিন ছেলে বিনা বাক্যে বাবা মায়ের ব্যাগটাগুলো বাসার সামনে দাঁড়ানো ভাড়া গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়েছিল।

জসিমের বিয়ের দু বছর পর মেয়ে নাসিমার বিয়ে হল। জসিমই বোনের বিয়ের সব দায়িত্ব পালন করল। কসিমুদ্দিন নিজেদের খারাপ স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না জানিয়ে টেলিফোনেই মেয়ে জামায়কে দোয়া করেছিল।

প্রথম প্রথম মাসে দু একবার ছেলেমেয়েরা টেলিফোনে খবর নিলেও এখন কাজের ব্যস্ততার জন্য ওরা আর টেলিফোন করে না বললেই চলে। সে সময় মায়ার টানে কসিমুদ্দিন প্রতি মাসেই দু একবার নিজের থেকেই ওদেরকে টেলিফোন করতো, কিন্তু হয় ওরা টেলিফোন ধরে ব্যস্ততা দেখাতো অথবা টেলিফোন থেকে অটো মেসেজ আসতো যার অর্থ নিরক্ষর কসিমুদ্দিন সঠিক ভেবে বুঝত না।
-আজ কাল কার সব ছেলেমেয়েরা এরকমই, খুব ব্যস্ত থাকে। সব সময় ছোটাছুটি করতে হয়।
কাজের মানুষ মোড়লের কথাই কসিমুদ্দিন তাকাল তার দিকে।
-তাও আপনার ছেলে মেয়েরা খুব ভাল বলতে হবে, অন্য ছেলে মেয়েদের মত বাবার সম্পত্তির লোভে বাবা মাকে ভালবাসার মিথ্যে মিথ্যে অভিনয় করে না। আর যাই হোক আপনার সম্পত্তিতে ওদের কোন লোভ নেই।
-বাবার সম্পত্তি লাভের জন্য যেকোন ছেলে মেয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকাটা সহজাত, এটাকে ঠিক লোভ বলা যাবে না। আর অন্য দিকটা হচ্ছে সারা জীবনের পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ সম্পত্তি সন্তানদেরকে দিয়ে যাওয়ার মধ্যেই যে জীবনের সব পরিশ্রমের সার্থকতা সে কথা কি করে বোঝাবে মোড়লকে! মোড়ল যে জন্ম হতভাগা, বাবা মায়ের কাছ থেকে সন্তানেরা কিছু নিলে, ওরা নিয়ে যে শান্তি পায় তার থেকে দেয়ার শান্তি যে অনেক অনেক গুন বেশী সে কথা মোড়লের পক্ষে বোঝা সম্ভব না।
ভাবল কসিমুদ্দিন।

আষাঢ় মাস, এবার বৃষ্টিও খুব চেপে বসেছে। কয়েকদিন ধরে সারা দিন রাত বৃষ্টি। মোড়লের কোন কাজ নেই তাই কসিমুদ্দিনের উঁচু বারান্দাওয়ালা মাটির ঘরের দাওয়াই বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে হুকো টানতে টানতে মেঝেই মাদুর বিছিয়ে কাত হয়ে শোয়া কসিমুদ্দিনের সাথে কথা বলছিল।
মোড়ল কেউ না ওদের। এ তল্লাটে ওর আপন বলেও কেউ নেই। ছোট বয়সে কি ভাবে যেন ও পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ তল্লাটে এসেছিল। কসিমুদ্দিনের বয়স তখন বছর পনেরো হবে তখন চার পাচ বছরের মোড়লকে কসিমুদ্দিনের বাবা বাজারে কুড়িয়ে পেয়ে বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছিল।
সে থেকেই ও এ বাড়ীতে। মোড়ল ওর আসল নাম না, সব ব্যাপারেই নাক গলিয়ে দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়ার একটা প্রবণতা সেই ছোট বয়স থেকেই ওর মধ্যে ছিল তাই কসিমুদ্দিনের বাবা ওকে মোড়ল বলে ডাকতো। সে ভাবেই মোড়ল ওর নাম।
কসিমুদ্দিনের বাবা বেচে থাকতে ওকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোড়ল নাকি কসিমুদ্দিনের বাবার কানে কানে কি একটা বলেছিল তারপর থেকে তিনি ওর বিয়ের কথা আর কখনো কিছু বলেননি।
মোড়ল আসাম বা ওই অঞ্চলের কোন খান থেকে এদেশে এসেছিল সেটা ওর নাকে মুখে বোঝা যায়। ও যখন একাকী অন্য মনস্ক হয়ে বসে থাকে তখন বোঝ যায় ও এখানকার কেউ না ওর গোড়া অন্য কোন খানে। এই বার্ধক্যে এসে কসিমুদ্দিন আর মরিয়ম বিবির একমাত্র আশ্রয় ওই মোড়ল।

বেশ কয়েক মাস ধরে মরিয়ম বিবির শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। একদম দুর্বল অনেকটা টেনে টেনে কথা বলে আর কষ্ট করে হাটা চলা করে। কিছুই মুখে দিতে চায় না, জোর করে কিছু খাওয়ালে বমি হয়ে যায়। সারাদিন কেবল ছেলে মেয়েদের কথা ভেবেই সময় পার করে। ডাক্তারও ঠিক রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রোগটা যে কি সেটা অন্য কেউ না বুঝলেও কসিমুদ্দিন বোঝে, কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। কারণ সে রোগের যে অসুদ তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
মরিয়ম বিবি রাতে খুব কম ঘুমায়। একটু চোখ বুজে আসলেই ঘুমের মধ্যে ভুল বকতে শুরু করে। শুধু ছেলে মেয়েদের নাম ধরে ওরা হারিয়ে যাচ্ছে, ওরা কোন বিপদে পড়ছে এসব বলে ঘুমের মধ্যে কাঁদতে থাকে। প্রথম দিকে কসিমুদ্দিন তার স্ত্রী ঘুমের মধ্যে এরকম করলে গায়ে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিত। কিন্তু তাতে করে সে রাতে মরিয়ম আর ঘুমাত না। যার ফলে ঘুমের মধ্যে ভুল বকলেও এখন আর জাগিয়ে দেয় না, ঘুমের মধ্যেই নিজে নিজে নানা কথা বলে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে মরিয়ম বিবি।
তার স্ত্রীর এ অবস্থা দেখে অশীতিপর কসিমুদ্দিন সব সময় মনে মনে একটা প্রার্থনা করে –আল্লাহ্‌ যেন মরিয়মের আগে তার মৃত্যু না দেয়।
সত্যি কথা বলতে জীবনের কাছ থেকে আর কোন আকাঙ্ক্ষা নেই কসিমুদ্দিনের। তার মত একজন সাধারণ মানুষের জন্য ভাল একজন স্ত্রী আর ছেলে মেয়েদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করা এর বেশী আর কিই বা আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে! আর তার সবই পূর্ণ হয়েছে। এখন সুন্দর স্বাভাবিক একটা মৃত্যু ছাড়া আর কোন চাওয়া তার নেই।
কিন্তু জীবনের ওই অনিবার্য ঘটনাটা তাকে সারাক্ষণ ভয়াতুর করে রাখে। তার নীরোগ শরীরের স্ত্রীর মৃত্যুর আগে সে কিছুতেই মরতে চায় না। মরিয়মকে বাদে সে নিজে যে ভাবেই হক বাস্তবতাকে মোকাবেলা করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারবে। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীর কষ্টটা এ পৃথিবীর কেউ বুঝতে পারবে না, পারা সম্ভব না। আর তাইতো তার স্ত্রী যেন একটা স্বাভাবিক মৃত্যুর মাধ্যমে সব জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় সেটা নিশ্চিত করে তারপর কসিমুদ্দিন নিজে মরে বাচতে চায়।

গত দু সপ্তাহ ধরে মরিয়ম কিছুই মুখে না দিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে সারাক্ষণ। কিন্তু তাই বলে রাতে ঘুমের ভিতর ছেলে মেয়েদের বিপদের হাত থেকে বাচানোর চেষ্টাতে কোন রকমে ভাটা পড়েনি। জেগে থেকে কথা বলতে মরিয়ম বিবির কষ্ট হয়, টেনে টেনে কথা বলে। কিন্তু ঘুমের ভিতর ছেলে মেয়েদের বিপদের হাত থেকে বাচানোর জন্য যখন ভুল বকে তখন কথার ভিতর একদম কোন আড়ষ্টতা থাকে না। ঘুমের মধ্যে মরিয়ম সুস্থ মানুষের মত কথা বলে।
এ সব কথা কাকে বলবে কসিমুদ্দিন। ঘুম ভেঙ্গে গভীর রাতে শুধু প্রভুর কাছে হাত জোড় করে তাঁকেই জানায় সবকিছু। ভাবে প্রকৃতই বিবাহ বন্ধনটা প্রভুর কাজ আর তিনি তাঁর নিজ আলয়ে বসেই তা করেন।

সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঠেলে ফেলে গত কয়েকদিন ধরে কসিমুদ্দিন তার ছেলে মেয়েকে প্রতিদিন টেলিফোন করে কারণ সে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে মরিয়মের দিন শেষ। কিন্তু ওদের সেল ফোন থেকে কেবলি ইংরেজিতে লেখা এস এম এস আসে যার বিন্দু বিসর্গও নিরক্ষর কসিমুদ্দিন বুঝতে পারে না।
কিন্তু সে বোঝে যে ছেলে মেয়েরা তাদের ব্যস্ততার কথা বলে টেলিফোন ধরতে পারছে না সেটা জানাচ্ছে।
ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কখনো কোন আর্থিক সহায়তার দরকার হয়নি কছিমুদ্দিনের, আর বাকি জীবনটা কাটানোর জন্য ওদের কাছ থেকে আর্থিক কোন সহায়তার দরকার হবে না সেটা তার ছেলেমেয়েরাও পরিষ্কার ভাবে জানে।
কিন্তু এখন টেলিফোনটা করছে হৃদয়ের টানে। ওদের মার হাতে বেশী সময় নেই সে কথা ভাল ভাবে বুঝেই কসিমুদ্দিন ছেলেমেয়েদের টেলিফোন করছে।
ওরা না ধরলে যে দেরী হয়ে যাবে সে কথা ভেবেই কসিমুদ্দিন বারবার টেলিফোনটা করছে।
কিন্তু কি যে হল, এ কয়দিন তো রিং বাজছিল কিন্তু সেদিন সকাল থেকে ওদের দুজনের টেলিফোনে রিং বাজা বন্দ হয়ে গেল।
ছেলেমেয়েদের টেলিফোনে রিং ঢুকছে না শুনলে ওদের মা আরো দুশ্চিন্তায় পড়বে এই ভেবে যে ওদের কোন বিপদ হল কিনা!
গত সপ্তাহে কয়েকবার মরিয়ম ছেলে মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করেছে। তখন কসিমুদ্দিন ওরা ব্যস্ত পরে ফোন করবে, এস এম এস আসছে বলে স্ত্রীকে বুঝিয়েছে।
কিন্তু এখন যদি তার স্ত্রী আবার জিজ্ঞেস করে তাহলে কি জবাব দেবে কসিমুদ্দিন! কথাটা ভেবে খুব দোদুল্যমানয়ায় পড়ে গেল সে।
এত বছর একত্রে কাঁটালো দুজনে তার মধ্যে কালেভদ্রে যে কিছু মিছে কথা স্ত্রীকে বলেনি তেমনটি নয়। কিন্তু এখন এই চরম বাস্তবতা ঢাকতে কি ভাবে এত বড় একটা মিথ্যে কথা তার স্ত্রীকে বলবে! সে কথা ভেবে চমকে উঠলো কসিমুদ্দিন।

অঝরে বৃষ্টি ঝরছে। এ বৃষ্টি যেন আর থামার না। চারদিক সব তলিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। বৃষ্টির একটানা সাঁ সাঁ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দই শোনা যাচ্ছে না।
বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে মোড়ল এক ভাবে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গড়গড়াটা টেনেই চলেছে। ওর পাশেই সকাল থেকে কতবার তার মালিক ছেলেমেয়েদের টেলিফোন করে চলেছে তা দেখেও ওর মধ্যে যেন ভাবের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
মোড়ল যেন কিছুই শুনছেও না, বুঝছেও না।
কসিমুদ্দিনের বাড়ীর একটু দূর দিয়ে নদী বয়ে চলেছে। বৃষ্টিতে নদীর দুকুল ছাপিয়ে গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বিকাল হতে হতে গ্রাম পানিতে ডুবে নদী আর গ্রাম একই সমতায় এসে দাড়িয়েছে। মানুষের ভিটে বাড়ীগুলোই কেবল নাক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলোও কতক্ষণ থাকে বলা মুশকিল।
গ্রামবাসীরা সবাই যখন তাদের ভিটে বাড়ী আর ঘরের জিনিস পত্র বাচানোর জন্য নানা তৎপরতা চালাতে ব্যস্ত তখন নিজের ভিটে বাচানোর কোন তৎপরতা কসিমুদ্দিন বা মোড়লের মধ্যে লক্ষ্য করা গেল না। বিকেল হতেই সন্ধ্যে নেমে অন্ধকার হয়ে আসলেও বাড়ীতে আলো জ্বালানোর কোন তাড়নাও ওরা কেউ অনুভব করল না।
হটাৎ আকশের বুক চিরে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ধারে কাছে কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়ার শব্দে ওদের যেন সম্বিত ফিরল।
কসিমুদ্দিন ব্যস্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করল।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে এসে ক্ষীণ কন্ঠে ডুকরে কেঁদে উঠলো কসিমুদ্দিন।
-আমাকে আর মিথ্যে কথাটা বলতে হল না। কসিমুদ্দিন মেঝেতে পাতা মাদুরের উপর ধপ করে বসে পড়ে নিজের বুকে মাথা গুঁজে কাদতে লাগলো।
-এখন আমার আর কোন চিন্তা থাকলো না, এখন আমি নিশ্চিন্তে মরে বাচতে পারবো।
স্বগত স্বরে কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলল কসিমুদ্দিন। যেন নিজেকে বলছে কথাগুলো।
মোড়ল একটুও নড়ল না। কেবল গড়গড়াটা নামিয়ে রাখল। ওর দুচোখের কোনা গড়িয়ে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।