জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা 'রিকশাওয়ালা'।

আপডেট: 2023-01-18 10:27:00

রিকশাওয়ালা

রাজপথ গলিপথে, সময় অসময়ে দিনে রাতে
ভাড়া খোঁজে, রোদে পুড়ে জলে ভিজে
মলিন মুখ, বেচে থাকাই যেন তাদের একমাত্র সুখ।
কখনো সখনো হবে, রিকশাওয়ালাকে দেখেছি সবে
ভাড়া দশ টাকা হলে, তাকে যেন কলে কৌশলে
বিশ টাকা হাকাতেই হবে।

রাগে গর গর করে সেই ক্ষণে, ভেবেছি মনে মনে
ব্যাটা জোচ্চোর, নীতিবোধ তার নেই যেন অভিধানে!

সেদিন হাঁটবো বলে বেরিয়েছি রাজপথে
কাউকে না নিয়ে সাথে।
ছিলাম আনমনে, হটাৎ আওয়াজ এল কানে
-বাবা, ‘আজ উপোস সারা বেলা, পেটে ক্ষুধার জ্বালা’।

থমকে দাড়ালাম, চমকে তাকালাম।
হাত পেতে ফুট পাথে, দাঁড়িয়ে অশীতিপর এক লোক
ভিক্ষুক নয়, সে এক রিকশা চালক।

আফসোসে ভরল মন, সমাজের এত অধঃপতন!
কাজ না করে, রিকশাওয়ালা ভিক্ষা করে!

-বয়স হয়েছে তাই, কেউ চড়ে না আমার রিকশায়
বল কি উপায়! বয়েস হলে কি ক্ষুধার জ্বালা মিটে যায়?
শরীরে বাচা ছাড়া হায়, আমার নেই আর কোন দায়।

আজ অবশেষে, উঠেছিল ইয়া বড় বপু এক সাহেব এসে
তাড়া ছিল তার, তাই তিনি রেগে মেগে একাকার।
-কিরে! টানতে পারনা জোরে, তাহলে কেন রিকশাওয়ালা হলে?
মাঝ পথে আমাকে ফেলে, গেলেন তিনি চলে।

ছাড়িয়ে দেব কাজ, মহাজন বলেছে আজ, তেড়ে মেড়ে
জমার টাকা না দিলে, বল আমার কি করে চলে?
একদিন দেব বড়জোর, তারপর তোর রিকশা নেব কেড়ে।
নেই তোর হুস? আমি ছাপোষা মানুষ
আছে মেলা দায়, সব চলে এই রিকশার আয়।

বাবা! নেই আমার কোন আর উপায়, এ দুনিয়াই
এ ভুবন ভরে চায় না কিছু ওরে, শুধু মরে বাচতে চায়।
কথা টুকু বলে আনমনে, তাকাল সে আকাশের পানে
চোখ দুটো নিল মুছে কাঁধের গামছায়।

দশ টাকার ভাড়া বিশ টাকা নেয়
জানি তা ভারি অন্যায়, কিন্তু তাতে কি আর হয়!
সে টাকায় বড় জোর তার আধাপেটা পরিবার
কত দিন পরে হাউ খাও করে পেট ভরে খায়।

বায়ু কোণে জমেছে মেঘ যমকাল
বেলা থাকতেও নিভিছে দিনের আলো।

তাকানু ঊর্ধ্ব গগনে
হেরিলাম যেন এমন আকাশ প্রথম এ জীবনে।
জাগিছে যেন সব ঘুমন্ত দানব, দাঁতগুলো ক্ষুরধার
ভেঙ্গে চুরে মিটাবে ক্রোধ তার, করে দেবে ছারখার।

গরীব রিকশাওয়ালা! শরীরে বল নেই, আছে ক্ষুধার জ্বালা।
বয়েস নিয়েছে কেড়ে, শরীরের সব বল ঝেড়ে
সাথে ক্ষুধা নিতে গেছে ভুলে।
অবশেষে এবার, সাঙ্গ করবে সব জ্বালা তার
নেবে তারে আদরে বুকে তুলে।