জীবন থেকে নেয়া কাহিনী অবলম্বনে রচিত ছোট গল্প 'নিঃশেষ হওয়ার এইতো সময়'। ।

আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫

নিঃশেষ হওয়ার এইতো সময়

 

জীবন ভর দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি করে জীবনটাকে মন মত সাজিয়ে নেয়ার পর আচমকাই শরীর যখন কথা বলতে শুরু করল তখনি কেবল অবনী বুঝল সময় হয়েছে গতি কমিয়ে এবার থামার।
অংকের হিসেবে আর বিশেষ করে অপরের সাথে তুলনা করে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় জীবন ওকে প্রকৃতই সাফল্য দান করেছে। ছেলেমেয়েরা প্রাচুর্যের মধ্যে মানুষ হয়ে পৃথিবীর সব থেকে নামি দামি স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করে নিজ নিজ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত।
বহমান বাতাসে সাফল্যের পালের তর তর শব্দ সুরের মধ্যে ডুবে থেকে কোন সাফল্যকেই আলাদা করে বড় কোন ঘটনা বলে মনে হয়নি অবনীর। অকালে তার স্ত্রী বিয়োগও জীবনের গতিকে একটু স্তিমিত করলেও তা ছিল সাময়িক।
অবনীর নিজ হাতে গড়া তার ব্যবসায়িক সম্রাজ্যে তাকে দেখভাল করার মত কোন ধরনের মানুষ বা সামগ্রীর কমতি ছিল না কোন দিন। কিন্তু একাকী এই বার্ধক্যে এসে শরীর যখন নিজের কথায় চলতে শুরু করেছে তখন নিজের দিকে তাকানোর তাড়না অনুভব করল অবনী।

গাড়ী যেমন পুরনো হয়ে গেলে টুকটাক সমস্যা দিতে দিতে এক সময় থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়, তেমনি বুকে একটু আধটু ব্যথা অনুভূত হতে হতে সেদিন বুকের ব্যথাটা প্রচন্ড বেড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। একমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে জীবন নিয়ে বেচে আছে সে। দুর্বল শরীর নিয়ে হাসপাতাল থেকে তার বিশাল বাংলো বাড়ীতে ফিরে বাড়ীটা এই প্রথম সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগলো।
ডাক্তারের কড়া নির্দেশ, হাটাচলা করা যাবে না আর কোন রকম টেনশান নেয়া যাবে না, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

বাড়ীর কাজের মানুষের ছোঁয়ার মধ্যে এই প্রথম উষ্ণতার অভাব বোধ হল অবনীর।
ভারী পর্দা আটা তার প্রশস্ত ঘরে ক্রিস্টালের ঝাড়বাতির ঝকমকে আলো তার কাছে মেকি মনে হতে লাগলো। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঢুকলে বাইরে প্রকৃতি যে ঠিক কেমন তা আঁচ করা সম্ভব নয় বলে এই প্রথম তার কাছে অনুভূত হতে লাগলো।
প্রায় একশ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তার ইন্ডাস্ট্রি কমপ্লেক্সের সাথে লাগোয়া প্রায় পাচ একর জায়গার উপর নির্মিত বিশাল বাগান বাড়ীতে সে শুধু একা বাসিন্দা। বাড়ী আর গার্ডেন দেখাশোনা করা আর তার ব্যক্তিগত ফাইফরমাশ খাটার জন্য বিশ জনের মত মানুষ স্থায়ী ভাবে এ বাড়ীতে কাজ করে। কিন্তু তাদের কেউ এখানে থাকে না, কাজ শেষে নিজ নিজ ঘরে সবাই ফিরে যায়।

সকালের দিকে হাসপাতাল থেকে ফিরে কোন রকমে রাতটা কাটিয়ে সকালেই এ বাংলোর পুরনো কেয়ারটেকার, তার থেকে বছর পাচেকের ছোট কদম আলীকে ডেকে পাঠাল।
কদম আলী অবনীর বাবার আমলের কর্মচারী। বয়স ষাট ছুয়েছে কিন্তু শরীরে বোঝা যায় না। সুস্থ সবল আর সব সময় হাসি খুশী থাকা একটা মানুষ। এ বিশাল বাংলো আর বিস্তীর্ণ আঙ্গিনার সব হিসাব তার পাচ আঙ্গুলের ডগায়। প্রতি মাসে বাংলোর রক্ষণাবেক্ষণ, বাগান পরিচর্যা, কর্মচারী আর বাংলোর খাবার দাবার, কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি মিলে প্রায় কোটি খানেক টাকা খরচ হয়, তার সব কিছুই কদম আলী এক হাতে করে থাকে।
বাংলোর মূল ফটকের অদূরে বাউন্ডারির বাইরে তার জন্য মালিক বাসা তৈরি করে দিয়েছে। অন্যান্য কর্মচারীরাও কোম্পানি কর্তৃক তৈরি করে দেয়া বাসায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে।

কদম আলী হাসি মুখে এসে সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে সাহেবের কুশলাদি জিজ্ঞেস করল।
-কদম আলী, আমার রুম আর বাংলোর সব পর্দা গুলো গুটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা কর। ভিতরে আমার দম আটকা মত মনে হচ্ছে। কাচের জানালা দিয়ে বাইরের আলো প্রবেশ করার ব্যবস্থা কর।
কদম আলী বেশ অবাক হল। বাংলো তৈরি করার সময় সাহেব নিজেই ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার সবাইকে বলেছিলেন –দেখ আমি ব্যস্ত মানুষ, ঘড়ির সময় আমাকে কাজ থেকে বিরত করুক তা আমি চায় না। কাজ শেষ হলেই আমি বিশ্রাম নেয়ার জন্য বাড়ী ফিরি। তাই সেটা সকাল দুপর বা রাত যে সময়ই হোক না কেন ভিতরে আমি নির্জন এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ চায়। আলো বাতাস শব্দ সব কিছুই যেন নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকে। দুপুরে ঘুমাতে আসলে যেন গভীর রাত মনে হয় আর গভীর রাতে জেগে কাজ করার সময় যেন দিন অনুভূত হয়।
যাহোক, আদেশ মত কদম আলী লোকজন ডেকে রিমোট টিপে সব জানালার পর্দা সরিয়ে ভিতরের সব লাইট অফ করে দিল।

সকাল তখন আটটা হবে, বাইরের ঝলমলে আলো এতদিন যারা কেবল উঁকি ঝুঁকি মারত সে আলো স্বচ্ছ কাঁচের ভিতর দিয়ে যেন হাসতে হাসতে কক্ষে প্রবেশ করল। খুব ভাল লাগলো অবনীর।
সময়টা মার্চের শুরু, বাইরে রংবেরঙের ফুল গুলো নিজেদের পুরোপুরি খুলে দিয়ে সূর্য কিরণ উপভোগ করছে। ফিরফিরে বাতাসে ফুলগুলো নাচানাচি করছে মাঝে মধ্যে।
দোতলার জানালা দিয়ে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে মনটা ফুরফুরে লাগলো অবনীর।
বিল্ডিঙটা আর বিশেষ করে অবনীর ঘরটা এমন ভাবে তৈরি যে দুদিকের স্বচ্ছ কাঁচ আটা জানালা দিয়ে বাংলোকে ঘিরে তৈরি ফুল ফলের বাগান, পুখুর সবই দেখা যায়।
-বাংলোটা এমন ভাবে বানানো যাতে করে ঘরে বসেই বাইরের সব দৃশ্য দেখা যায়। তাহলে অমন ভারী পর্দা ঝুলিয়ে জানালা গুলো বন্দ করা কেন! বন্দই যখন থাকে তখন দেয়ালের পরিবর্তে স্বচ্ছ কাঁচই বা কেন লাগান!
মনে মনে অবনী নিজেকে নিজেই প্রশ্নটা করল। মনটা আফসোসে ভরে গেল।
কাঁচ আটা জানালার ওপারে দেখা যাচ্ছে ফুলে ভ্রমর বসছে, এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করার ছলে নিজেদের অজান্তে পরাগায়ন করছে।
আহ, ফুলের গন্ধে বাইরেটা নিশ্চয় মৌ মৌ করছে, তার সাথে ভ্রমের গুঞ্জনে বাইরে এক অপরুপ আবহের সৃষ্টি হয়েছে।
কদম আলীর সরাসরি পরিচর্যায় বাংলো প্রাঙ্গণে ফুলের পাশাপাশি লাউ বেগুন সশা টমেটো ইত্যাদি সবজিরও চাষ হয় যাতে সাহেব অরগানিক শাক সব্জি খেতে পারে। সে সবের কিয়াদংশ কেবল সাহেবের লাগে বাকি সব সাহেবের নির্দেশ মত এখানকার কর্মচারীদেরকে কদম আলী ভাগ করে দেয়।
এছাড়া পুখুরের মাছ, বাগানে আম জাম কাঠাল নারকেল যা হয় তার প্রায় সবটুকুই সব কর্মচারী আর কারখানার সবার বাসায় নিয়মিত পাঠিয়ে দেয় কদম আলী।
মোটকথা বাংলোর বিশাল প্রাঙ্গণে যে শাক সব্জি মাছ, ফল মুল ইত্যাদি যা কিছু উৎপাদিত হয় সেগুলো বাংলোতে কাজ করা কর্মচারী আর কারখানার সবাই নিয়মিত কম বেশী ভাগ পেয়ে থাকে। তাছাড়া কারখানার কর্মচারী কর্মকর্তাদের বাসায় কোন জন্ম দিন, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ফুল এই বাংলো থেকে সরবরাহ করা হয়। আর তাইতো এই বাংলো প্রাঙ্গণে চাষ হওয়া সব কিছুর দিকে সবারই আন্তরিক নজরদারি আছে। সবাই এটাকে নিজের মনে করে।

গরীবের ঘরে জন্ম কদম আলীর, লেখা পড়া খুব একটা জানে না। পনের ষোল বছর বয়স থেকে এখানে। অবনীর স্ত্রী ওকে খুব পছন্দ করত, কদম আলী তাকে সাহেব মা বলে ডাকতো। কদম আলীর সামনেই দিনে দিনে এই বিশাল বাংলো বাড়ীটা নির্মিত হয়েছে। বাংলো আঙ্গিনায় প্রতিটি গাছ সাহেব মার সঙ্গে থেকে কদম আলী লোকজন দিয়ে লাগিয়েছে।
কিন্তু তিনি আজ আর নেই, সেই কবেই সব কিছুর মায়া কাটিয়ে বিদায় নিয়েছে। ছোট কাল থেকেই সাহেবের ছেলে মেয়ে দুটো কেবল কালেভদ্রে আসতো বেড়াতে। ওরা সেই ছোট কাল থেকেই বাইরে বাইরে, আর এখন তো সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে তাদের স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
কথাটা ভেবে কদম আলীর বুক খালি করে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল।

-কদম আলী, এই জানালার কাঁচ গুলো খুলে দেয়া যায় না। বাইরের বাতাস এখানে ঢুকতে পারে না, ফুলের সুবাস, ভ্রমের গুন গুনানি কিছুই এখানে প্রবেশ করতে পারে না।
সাহেব জানে কাঁচ গুলো খোলার ব্যবস্থা নেই তবুও কেন যে কদম আলীকে সেটা জিজ্ঞেস করছে, নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে সে কথাই ভাবল কদম আলী।
দুর্বল শরীরে অবনী কাঁচ আটা ঘরের ভিতর হুয়িল চেয়ারে বসে বাটন টিপে টিপে জানালার ধার ঘেঁসে চলাচল করতে করতে জানালা দিয়ে বাইরেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল। বাইরে বেরিয়ে প্রকৃতির ছোয়া আর স্বাদ গন্ধ পাওয়ার জন্য তার মধ্যে একটা অসহায় চঞ্চলতা কাজ করতে লাগলো।
কাঁচের জানালা গুলো সিল করা। এ কাচের ভিতর দিয়ে বাইরেটা দেখা যাবে কিন্তু বাইরে থেকে ভিতরটা দেখা যাবে না। জানালা থেকে মোটা ভারী পর্দার আবরণ যখন সরানো হল অবনী কেবল তখনই অনুধাবন করল বাইরের কোন কিছু ভিতরে আসতে মানা। আর এ পর্যায়ে জীবন ওকে এমন একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যে পায়ে হেটে বাইরে বেরিয়ে প্রকৃতির সাথে নিজেকে একাত্ম করার সামর্থ্য সে হারিয়েছে। আর ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞায় বাইরের জল হাওয়া গায়ে লাগাল একদম বারণ।
-আমি কি করব কদম আলী বলতে পারিস!
চরম অসহায়ত্ব ঠিক্রে পড়ল অবনীর কন্ঠ থেকে।
কি বলবে কদম আলী? যার অঙ্গুলি হেলানিতে ওকে চলতে হয় সেই মালিক তাকে জিজ্ঞেস করছে কি করবেন তিনি!
-কাউকে খবর দেব বাবু?
কদম আলীর কথায় অবনী তাকাল তার চোখে। যেন বুঝতে চেষ্টা করল কাকে খবর দেয়ার কথা ভাবছে কদম আলী।
-না, ছেলে মেয়েদের খবর দেয়ার দরকার নেই, ওরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছে থাকতে দে। ওরা নিজেদের জীবন নিজেদের পছন্দমত মত সব সাজিয়ে নিয়েছে। আর এ সবের কিছুই দরকার নেই ওদের।
কদম আলী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সাহেবের মুখের দিকে।
-তুই এক কাজ কর, আমাদের সিনিয়র আইনজীবিকে খবর দে, আজকেই আসতে বল সন্ধ্যার পর। আর কালকে কারখানা বন্দ রাখার জন্য সিইও সাহেবকে আমার নির্দেশের কথা বল। কাল সকালে সব কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের পরিবার পরিজন সহ সারাদিনের জন্য এই বাংলো তে আসতে বল। বল, সবার জন্য পিকনিক হবে। ওদের সবার জন্য খাবারের আয়োজন কর। বাংলো আঙ্গিনার সব শাক সবজি, মাছ আর খামার থেকে গরু ছাগল জবাই করে বাংলোর মধ্যেই রান্নার আয়োজন কর।
চোখ চানাবড়া করে তাকিয়ে সব শুনতে লাগলো কদম আলী।
-বাংলোর সব ফুল দিয়ে বড় করে গেট সাজানোর ব্যবস্থা কর। কাল সকাল থেকে বাংলো যেন হাজার মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। এ কারখানার সব কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের পরিবার সহ নিজের বাড়ীতে বেড়াতে আসার মত যেন আনন্দে থাকে সে ব্যবস্থা কর। সবাই খুশী মত পুখুরের মাছ ধরবে, গাছের ফল পাড়বে যেন এটা তাদের নিজের বাড়ী।
-কদম আলী, নিঃশেষ হওয়ার সময় এসেছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাটা বলল অবনী।
কদম আলী সাহেবের শেষের কথাটার অর্থ ঠিক বুঝল না। তবে আদেশ মত সব ব্যবস্থা করার কাজে লেগে গেল।
অবনী সারা রাত জেগে কারখানার আইনজীবীর সাথে কাজ শেষ করে সকালে হুয়িল চেয়ারে বসে বাংলোর বাইরে আসলো। হাসি মুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে লাগলো। হুয়িল চেয়ারের বাটন টিপে সারা আঙ্গিনা ঘুরতে লাগলো। এই অসুস্থ শরীরেও তাকে একদম হালকা ফুরফুরে লাগলো।
বাংলোর আঙ্গিনা যে এত সুন্দর এর আগে তা দেখার কোন ফুসরত পায়নি অবনী। গাছে গাছে ঝুলে থাকা ফুলের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে সে সব কিছু ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগল।
বাইরে থেকে বাংলোর দোতলার কাঁচ আটা কোণার ঘরটার দিকে লক্ষ্য করে দেখল কিছুক্ষণ। পর্দা আটা ঘরের ভিতর কি হচ্ছে তা বাইরে থেকে একটুও বোঝার উপায় নেই। কিন্তু কাঁচের জানালাগুলো বাইরে থেকে ভারী সুন্দর লাগে।
বাইরের মানুষদের দেখানোর জন্যই অত দামী কাঁচ এটে জানালা গুলো তৈরি করা। অপরকে দেখানোর মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে। তবে সে তৃপ্তিটা মনের, সেটা হিসেব করে বুঝতে হয়, তার জন্য বাইরের মানুষেরা দেখে কতটুকু তারিফ করল তার উপর নিজের তৃপ্তির পরিমাণটা নির্ভর করে। কিন্তু আত্মার তৃপ্তিটা ঠিক তার উল্টো এটা ভিতরে অনুভব করতে হয়।
মৃদু হাসি ফুটে উঠলো অবনীর চোখে মুখে। সব ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে আনন্দে ডগমগ করতে লাগল সে, যেন কোন শিশু জীবনে প্রথম বারের মত সব কিছু দেখছে।
দুপুর হয়ে আসলো সবাই খাবারের জন্য নিজ নিজ পরিবারের সকলকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে অবনীর সাথে সাথে ঘোরা তার প্রিয় কর্মকর্তা কর্মচারীরা এক এক করে খাবারের জন্য চলে গেল। অবনী ধীরে ধীরে একটা পুখুরের ঘাটের উপর দাঁড়ানো বকুল গাছের ছায়ায় হুয়িল চেয়ারটা পার্ক করল।
বকুল গাছের তলাটা তার স্ত্রীর খুব প্রিয় জায়গা। সান বাধানো ঘাটের উপর লাগান গাছটা। দু একবার এসে তার স্ত্রীর সাথে বসেছে এই গাছটার নিচে। আজ খুব মনে পড়তে লাগলো সে সব কথা।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মাইকে দেয়া ঘোষণা শুনে সব কর্মকর্তা কর্মচারীরা পরিবার সহ মাঠের মাঝখানে তৈরি ষ্টেজের সামনে টাঙ্গানো সামিয়ানার নিচে পাতা চেয়ারে বসলো।
পরিকল্পনা মত ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র আইনজীবী ষ্টেজে উঠে স্বল্প ভুমিকা দিয়ে অবনীর সব সম্পত্তির নিয়ে গঠিত ট্রাস্টের ঘোষণা পড়ে শোনাতে শুরু করলেন।
সবাই মাঠে জড় হয়ে সিনিয়র আইনজীবীর ঘোষণা শুনতে ব্যস্ত। অবনী উঁচু ঘাটের উপর হুয়িল চেয়ারে বসে সেদিকে তাকিয়ে রইল।
বাংলোর মানুষ ভর্তি মাঠে আনন্দে উদ্বেলিত তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে অবনীর দুচোয়াল ভিজেয়ে অশ্রু বন্যা ঝরতে লাগলো। দেয়ার মধ্যে, নিজেকে নিঃশেষ করার মধ্যে যে তৃপ্তি সেটা কেবল হৃদয়ে অনুভব করা যায়।
সবাই যখন আনন্দে আত্মহারা কদম আলী তখন অবনীর অলক্ষে বিভিন্ন গাছ গাছালির আড়াল থেকে তার দিকে নজর রাখছিল।
পুখুরের সান বাঁধানো ঘাটের উপর দাড়ান ছায়া ঘেরা বকুল গাছের নিচে সামনের দিকে তাকিয়ে হুয়িল চেয়ারে উপবিস্ট অবনীর ঘাড়টা একদিকে হেলে পড়া লক্ষ করে কদম আলী ডুকরে কেঁদে উঠে সেখানে ছুটে গেল।